স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে ২০২১ সালে ৬ষ্ঠ ডিজিটাল আদমশুমারি করা হবে। এ কাজে সহায়তা করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসার)।
বলা হচ্ছে, এ পদ্ধতির দশমিক ৫ মিটার এলাকাও চিহ্নিত করা যাবে সহজে। এমনকি একটা সুচ পড়ে থাকলেও ধরা পড়বে ক্যামেরায়। এ পদ্ধতিতে আদমশুমারি সঠিকভাবে হবে বলে মনে করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
এর আগে ২০১১ সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়। যা পঞ্চম আদমশুমারি বলে পরিচিত। ২০১১ সালের ৫ দিনব্যাপী (১৫ থেকে ১৯ মার্চ) এ গণনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিএস প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি পরিচালনা করে থাকে।
বিবিএস সূত্র জানিয়েছে, এ পদ্ধতিতে দেশের একটি খানাও (পরিবার) বাদ পড়বে না। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে আদমশুমারিতে সারাদেশে চার লাখ গণনাকারী তথ্য সংগ্রহ করবেন। একটি মানুষও গণনার বাইরে থাকবে না। সব মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করা সহজ হবে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে।
আদমশুমারি মানেই সারাদেশ ব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞ। কিন্তু ডিজিটাল এই শুমারিতে কোনো খাতা-কলমের ব্যবহার থাকবে না। সব কিছুই অনলাইনে ডাটা সংগ্রহ করা হবে। শুমারির প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ‘পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনশাস ২০২১’ প্রকল্পের আওতায় ৬ষ্ঠ আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হবে।
০৭ মে প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পনা নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করেছে বিবিএস। আলোচনায় বিবিএস’র ঊর্ধতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদেশি পরামর্শক, আইটি এক্সপার্টসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহারের বিষয়টা দেখভাল করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল রনি।
স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশে এবারই প্রথম আদমশুমারিতে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করা হবে। স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোথায় কি আছে। ডাটা কালেক্টরদের তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে।
২০১১ সালের আদশুমারি ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও ৬ষ্ঠ আদমশুমারি ৭ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। এই সাতদিনে চার কোটি খানায় (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ভাসমান লোকজনকে গণনা করা হবে মধ্যরাতের পরেই। বহুতল ভবনের একজন বাসিন্দাও যাতে গণনা থেকে বাদ না পড়ে সেই কথাও চিন্তা করছে বিবিএস। সঠিক শুমারি দেশবাসীকে উপহার দিতে বিবিএস সব পর্যায় থেকে মতামত গ্রহণ শুরু করেছে।
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চার লাখ ডিজিটাল ডাটা কালেক্টর আদমশুমারিতে অংশ নেবেন। তাদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে সেই বিষয়েও ছক কষছেন বিবিএস। ইমেইল, অনলাইন, ট্যাব, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অডিও ভিজুয়্যালের বিষয়ে ডাটা কালেক্টরদের প্রশিক্ষণ দেবে বিবিএস।
আদমশুমারির জন্য মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে সাত দিন। কিন্তু এর পেছনে থাকবে তিন বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞ, প্রশিক্ষণ। সব তথ্য সংগ্রহ করতে অত্যাধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। তথ্যগুলো এমনভাবে সংগ্রহ করা হবে যেন নাগরিক চাইলে এর থেকে সেবা নিতে পারেন।
আদমশুমারির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালের শুমারি হবে সব থেকে আধুনিক। আমরা লেটেস্ট টেকনোলজি ব্যবহার করবো। মানুষ গণনার ক্ষেত্রে খাতা, কলমের ব্যবহার থাকবে না। সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবো অনলাইনে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের থেকেও আদশুমারি দেশের সব থেকে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারা ভোট দিতে পারেন। কিন্তু আদশুমারিতে সমস্ত মানুষকে গণনা করতে হয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারো মতে ২০ কোটি আবারও কেউ বলে ১৬ কোটি। সর্বশেষ আদমশুমারিত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জরিপে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার। ২০২১ সালের শুমারির পরে সঠিক তথ্য জানা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পর পর আদমশুমারি করা হয়।
বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তারপর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি হয়ে আসছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস